নিজের একটি ঠিকানা সবারই স্বপ্ন। কিন্তু, সব স্বপ্ন যেমন সত্যি হয়না তেমনি নিজের ঠিকানা গড়াটাও অনেক সময় সাধ্যের বাইরে থেকে যায়। এমন সময় বাসা ভাড়া নেয়াই একমাত্র উপায় থাকে। কিন্তু বাসা ভাড়া নেয়ার যে ধাপগুলো সেগুলোতে থাকে অনেক ভুল, যেগুলো এড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু এই ভুলগুলো কিভাবে এড়াবেন ? বাসা ভাড়া প্রস্তুতি সম্বন্ধে একটি ধারণা রাখার মাধ্যমে আমরা এরকম ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে পারি। যারা বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছেন তারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন কি করা যাবে কি করা যাবে না! কিন্তু যারা বাসা ভাড়া নিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার গাইডলাইন। চলুন তবে, জেনে নেই বাংলাদেশ বাসা ভাড়া নিতে হলে কি কি আপনার অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত!
গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ
বাংলাদেশে বাসা ভাড়া এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আপনার তালিকার প্রথমেই যে নামটি থাকবে তা হচ্ছে, ইউটিলিটি সংযোগ। হয়ত আপনার জানা আছে, বিভিন্ন এলাকাগুলোতে বিশেষ করে নতুন ভবনে ইউটিলিটি সংযোগের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ থাকে। বাসা মালিককে জিজ্ঞেস করুন, গ্যাস সংযোগ রয়েছে কিনা কিংবা পানি আসার কোন নির্দিষ্ট সময় রয়েছে কিনা! একটি শান্তিময় জীবনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইউটিলিটি সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভাড়া সংক্রান্ত চুক্তি
ইউটিলিটি সংযোগের পর এবার আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে বাসা ভাড়া সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে কিনা! একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে এটি আপনার অধিকার এবং এই চুক্তি করা বাসা মালিকের কর্তব্য। বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী এই চুক্তিটি বাসা মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে হয়ে থাকে। এই চুক্তিটিতে নিম্নলিখিত কিছু শর্ত থাকে তা হল-
ভাড়া প্রদানের তারিখ- অনেক বাসা মালিক মাসের প্রথন দিনে কিংবা মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাড়া নিয়ে থাকেন। অনেকে আবার আছেন যারা মাসের শেষেও ভাড়া নিয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে বাসা মালিকের সাথে আপনার সুবিধামত একটি তারিখ ঠিক করে নিতে পারেন।
অগ্রিম টাকা- বাসা ভাড়া নেয়ার আগে বাসা মালিককে কয়েক মাসের ভাড়া অগ্রিম জমা দিতে হয় যা খুবই স্বাভাবিক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। যদিও বাড়ি ভাড়া আইন ১৯৯১ এ বলা আছে, অগ্রিম টাকা হিসেবে ভাড়াটিয়া কেবল এক মাসের ভাড়া জমা দিবেন। কিন্তু অনেকেই এই নিয়মটি মেনে চলেন না।
ভাড়া বৃদ্ধি- বাংলাদেশে ভাড়াবৃদ্ধি আর একটি সাধারণ ঘটনা। কোন প্রকার নিয়ম বা কারণ ছাড়াই বাসা মালিক বাসার ভাড়া বাড়িয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বাসা ভাড়া। তাই বাসা ভাড়া নেবার আগে অবশ্যই বাসা মালিক থেকে শুনে নিন, ভবিষ্যতে তার ভাড়া বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা আদৌ রয়েছে কিনা!
নোটিশের সময়কাল
বাংলাদেশে বাসা ভাড়া নেয়ার আগে যে কাজটি করা খুবই জরুরী তাহলো, নোটিশের সময়কাল সম্বন্ধে আগে থেকেই জেনে নেয়া। কোন প্রপার্টি কেনার জন্য যদি এখনও প্রস্তুত না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে বাসা ভাড়া নেয়াই একমাত্র পথ থেকে যায়। যদিও ভাড়া বাসায় মানুষ বেশি সময় ধরে থাকে না। তাই, কত সময় আগে আপনাকে অগ্রিম নোটিশ দিতে হবে তা সম্বন্ধে অবশ্যই জেনে নিন।
মেরামত
মেরামত সংক্রান্ত চুক্তিতে এই শর্তটি তেমন ভাবে উল্লেখ্য না করা হলেও, এটি খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। প্রায় সকল বাসা মালিকেরাই ভাড়া দেবার আগে বাসা মেরামত করেন। বাসাটি মেরামত করে নতুনের মত করে তোলার চেষ্টা খুবই স্বাভাবিক। তাই, ভাড়া বাসায় উঠার পর যদি কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কি প্রক্রিয়া সে সম্বন্ধে জেনে নেয়া ভালো। যেমন ধরুন, বাসায় ওঠার পর ব্যবহারের বাথরুমে কোন কিছু ভেঙ্গে গেল কিংবা নষ্ট হয়ে গেলো, এটা কে মেরামত করবে বাসা মালিক নাকি ভাড়াটিয়া?
সার্ভিস চার্জ
ভাড়া এবং ইউটিলিটি বিল ছাড়াও আরও কিছু আনুষঙ্গিক চার্জ আছে যা প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে দিতে হয়। যদিও এই চার্জগুলো ভবনের সুযোগসুবিধার ওপর নির্ভর করে প্রতিটি ভবনে ভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু কিছু ভবনে সার্বক্ষনিক সিকিউরিটি এবং জেনারেটর সার্ভিস থাকে। ভবনে কোন নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জ না থাকলেও বাসা ভাড়া নেবার আগে বাসা মালিককে সার্ভিস চার্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না।
সুযোগসুবিধা
যে ভবনে বাসা ভাড়া নিতে চাচ্ছেন সেখানে কেমন সুযোগসুবিধা রয়েছে সে সম্বন্ধে জানতে ভুলবেন না। কেননা, বাসা বদলের পর এমন তথ্য জানতে পারায় তৈরি হতে পারে ভয়ংকর এক অবস্থার। বাসা ভাড়া নেবার আগে সকল সুযোগসুবিধা সম্বন্ধে ধারণা থাকলে, বাসা বেছে নেবার সিদ্ধান্ত অনেকটাই সহজ হবে। একটি ভবনের এই সুযোগসুবিধাগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনকে অনেক ভাবে প্রভাবিত করবে, তাই ভালমত যাচাই করুন। এমনকি ভবিষ্যতে কি কোন নতুন সুযোগসুবিধা যোগ হতে পারে সে সম্বন্ধেও খোঁজ নিন।
নিরাপত্তা এবং সাবধানতা
একটি প্রপার্টির সবচেয়ে বড় যে সুযোগসুবিধা হল, সেটি কতটুকু নিরাপদ! সর্বাক্ষনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন এবং এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো কতটুকু আপনার বাসাকে নিরাপদ রাখতে পেরেছে? এসকল বিষয়ে জানতে ভুলবেন না। এবং আপনি যদি নিজে থেকে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে চান সেক্ষেত্রে কোন ধরণের অনুমতি বাসা মালিক থেকে আপনার নিতে হবে সে সম্বন্ধে জেনে নিন।
নিয়ম কানুন
বাসা ভাড়া নেবার আগে বাসা মালিক থেকে নিয়মকানুন সম্বন্ধে জানতে ভুলবেন না কিন্তু! অনেক সময় ভাড়াটিয়াদের অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় যা একজন বাসা মালিকের ক্ষেত্রে হয় না। যেমন, ছাঁদ ব্যবহার না করা, প্রধান দরজা বন্ধের সময়কাল এবং বাসায় হৈচৈ করাও অনেক ক্ষেত্রে নিয়মকানুনের মধ্যে পরে। বাসা মালিক থেকে ঠিক মত সকল নিয়মকানুন জেনে নিন যাতে করে, পরবর্তীতে অজান্তে কোন নিয়ম লঙ্ঘন না হয়ে যায়।
ব্রডব্যান্ড এবং ক্যাবল কানেকশন
ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ছাড়া একটি দিন পার করাও যেন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়! এবং নতুন বাসা যখন আমরা উঠি সেখানে ইন্টারনেট কানেকশন থাকা যেন অত্যাবশ্যকীয়। বাসা বদলের আগে খোঁজ নিন যে বাসায় উঠতে চাচ্ছেন সে ভবনে কি কোন নির্দিষ্ট আইএসপি আছে কিনা। অনেকে আছেন যারা ক্যাবল কানেকশনে টিভি দেখতে পছন্দ করেন। এগুলো যাচাই করতে ভুলবেন না।
RIFAT HOUSE NOAKHALI ©COPYRIGHT 2023
Post a Comment
0Comments